পাথন্ধের বৈভব / ময়নুল ইসলাম পল / কিউরেটর: নাসিমা হক মিতু
ময়নুল ইসলাম পল একজন নিষ্ঠাবান/সমর্পিতভাস্কর। নানা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে একটানা/অবিচ্ছিন্নভাবে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিদিনের যাপিত জীবনের সহজ সরল সামান্য বিষয়, কথন্যে সাধরণ নিত্যদিনের কোনো অবজেনী তাঁর কাজের অনুপ্রেরণা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো চেনা অবজেক্ট তার প্রচলিত গুণ বা অর্থ হারিয়ে ভাস্কর্যের রূপ নির্মস করেছে। কখনোবা সামাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাঁর ভাস্কর্য রূপের উপমা নির্বাচনের সূত্র হয়েছে।
এখন পর্যন্ত পলের ভাদর্য চর্চায় অপ্রচলিত নানা উপকরণ বা অবজেক্ট অন্বেষণের যেমন লক্ষণ দেখা যায় তেমনি তাঁকে ভাস্কর্যের প্রথাগত মাধ্যম ও পদ্ধতিতে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। পলের এবারের প্রর্দশনীটি পাথর এক্ষণ ভাস্কর্য নিয়ে। ভাস্কর্য চর্চার শুরু থেকে পল তক্ষণ ভাস্কর্যে অগ্রহী। ঢাকায় বসবাসের সময় তাঁর তক্ষন ভাস্কর্যে কাঠই প্রধান উপকরণ ছিল- এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে পাথর দুষ্প্রাপ্য। নব্বইয়ের দশক থেকে স্থাপত্য নির্মাণের রুচি বা চাহিদা পরিবর্তনের সাথে সাথে দেশের বাইরে থেকে পাথর আমদানি বাড়তে থাকে। যা তুলনামূলকভাবে বেশ ব্যয়বহুল। আমাদের মতো দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোতে কমিশনবিহীন ব্যক্তিগত ভাস্কর্য চর্চায় পাথরে ভাস্কর্য নির্মাণ কঠিন একটি বিষয়। শুধু ব্যয়বহুলই নয়। এগুলি সংরক্ষণ করাও কঠিন। পলের বর্তমানে রাজশাহীতে বসবাস তাঁকে পাথর তক্ষণ ভাস্কর্য নির্মাণের একটা সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছে। রাজশাহীতে অনেক আগে থেকেই পরা নদীর বাঁধ তৈরি এবং কনস্ট্রাকশনের কাজের জন্য ভারত, ভুটান থেকে ভূমিপথে বোল্ডার, গ্রানাইট পাথর আসে যা তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুল এবং আকারে ছোট হওয়ায় সংরক্ষণের জন্য সহজ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য পাঠে তাই হয়ত কাঠের চেয়ে পাথর ভক্ষণের প্রচলন বেশি। পল স্বাভাবিকভাবেই এই পরিবেশ থেকে অনুপ্রাণিত হয়, নতুন একটি উপকরণ নিয়ে কাজে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
পলের পাথর ত্যাক্ষণ কাজগুলি তাঁর পূর্বের কাঠ তক্ষণ ভাস্কর্য থেকে অনেক দূরবর্তী এমন নয়। তীক্ষু রেখা ও তলের সমন্বয় গুরুত্ব পায়। তবে পাথর তন্দরে প্রক্রিয়া এবং এর ছোট আকার কাজগুলিকে একটা ভিন্ন বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। কোনো কোনো কাজ পাথরের শক্ত চরিত্রকে ধারণ করে আবার কোনো কাজ মাটির মতো নরম অনুভূতি দেয়। দক্ষতার চেয়ে উপকরণের সাধারণ চরিত্র বা আয়ো নির্দিষ্ট করে বললে কাজগুলিতে আদিম রূপের প্রতি পলের আকর্ষণ প্রকাশ পায়। উপকরণের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং উপকরণ। স্পর্শের অনুভূতি এই ভাস্কর্যগুলির অন্যতম বৈশিল্পং।
নাসিমা হক মিতু
পাথরের বৈভব
প্রাতিষ্ঠানিক কারণে শিক্ষার্থীর প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমার পাখত অনুশীলন। উপকরণ, ডিজেল ও গ্রাইন্ডার ব্যবহার ও ভাস্কর্ণ মসৃণসহ পাথর সম্পর্কিত অনেক কিছুতেই শিক্ষার্থীর কাছে আমাকে দীক্ষা নিতে হয়, এই অর্থে শিক্ষার্থী আমার শিক্ষক।
টেরাকোটা ও স্থাপনার মতো ভিন্নতর মাধ্যমে ভাস্কর্যসৃজনে তক্ষণ পদ্ধতির অন্যতম উপকরণ পাথর। পাথরে প্রাশসৃষ্টি করা নতুন কিছু নয়, ফলে অবজেক্টকে নিজের মতো করে মানিয়ে নেয়া সৃষ্টির অন্যতম লক্ষন।
প্রাথমিকভাবে পাথর তক্ষণে ৬৬তা ও শঙ্কা থাকলেও কাঠ তক্ষণের অভিজ্ঞতা আমাকে উদ্দীপ্ত করে।
শুরুতেই মিনিমালিস্টের মতো ৬৪ সময়ে ও স্বল্প পরিশ্রমে শিল্পকর্ম সংম্পন্ন করার চেষ্টা করি, যেভাবে একজন দৌড়বিদ নিজস্ব ট্রাক বদল করে গন্তব্যে পৌঁছে যান। তবে এমন জার্নিতে কখনো পাথর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হই, কখনোবা পাথরকে নিয়ন্ত্রণ করি। এই দুই প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে আমার শিল্পসৃষ্টি, এইসব সৃষ্টিতে প্রাণীর বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায় যেখানে মানুষের সরব উপস্থিতি থাকে।
আবার মানুষ ছাড়া কখনো কোনো পরিচিত অবজেক্টকে নতুনভাবে উপস্থাপন করা হয় সেখানেও মানুষ নিরবে থাকে। কেননা মানুষ অনেক কিছুর নিয়ন্ত্রক। ব্যক্তি বা সমাজ জীবনের সময় অসময় মানুষের তৈরি, তাই অবজেক্টগুলো শুধু কাছের নয়, দূর অতীতের সময়-অসময় বর্তমানকে মেলে ধরে। যেভাবে মসৃণ ও অমসৃণ তলের সমন্বয়ে ভাঙ্গম পূর্ণতা পায়।
বিশ বছর পর একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী যা শিল্পযাত্রার জন্য বোধকরি কম সময় না। ভাই কোনো অজুহাতের গল্প তৈরি করবো না। তবে একথা সত্য, আমাদের শিল্পচর্চা রাজধানীকেন্দ্রিক হওয়ায় বিচ্ছিন্নতার সংস্কৃতি গড়ে তোলে। তারপরও দুঃসময়ে ভাস্কর্য প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য কলাকেন্দ্রের সংগঠক, কিউরেটর ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ।
ময়নুল ইসলাম পল